Skip to main content

অপরিচিতা

গল্পঃ অনুধাবন উৎসর্গঃ অপরিচিতা লেখকঃ দিগন্ত দিগন্ত রিক্সায় ডান পা দেওয়া মাত্রই আয়শা চিৎকার করে বলে, ওই রিক্সায় উঠবেনা বলে দিলাম। কি পেয়েছ তুমি হ্যাঁ? রাতে ফোন দিলে ফোন ধরবেনা, দিনে দেখা করার সময় আমাকে রিক্সায় ২০-২৫ মিনিট বসিয়ে অপেক্ষা করাবে। কি ভাবো তুমি আমাকে? আমি এতোটাই সস্তা না'কি? দিগন্ত রিক্সা থেকে নেমে মাথাটা নিচু করে বলে, না মানে! আমি'তো ইচ্ছা করে দেরি------ কথা শেষ হওয়ার আগেই আয়শা আবারো চিৎকার করে বলে উঠে, ওই চুপ। আর একটা শব্দ যেন তোমার মুখ থেকে না শুনি। টিউশনি শেষ করে আসতে আসতে দেরি হয়ে গেছে এটাই বলবে তো তাইনা? এটা আর নতুন কি? প্রতিদিন তো একই কথা শুনি তোমার। তোমাকে আমার আর একদম সহ্য হচ্ছেনা। তুমি যাও এখান থেকে। দিগন্ত মাথাটা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আজকে একটু বেশিই রেগে আছে আয়শা। রাগটা এত সহজে কমবে বলে মনে হয়না। আয়শা কিছুক্ষণ পর চিৎকার করে উঠে, ওই তোমাকে না আমার সামনে থেকে যেতে বলেছি। দাঁড়িয়ে আছো কেন? দিগন্ত আবারো মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। আয়শার রাগটা আরো বেড়ে যায়। হাতে থাকা ব্যাগটা দিগন্তের দিকে ছুড়ে মেরে চিৎকার করে বলে, আমার সামনে থেকে যাওওওওওওও তুমি। দিগন্ত এবার মাথাটা উপরে তুলে আয়শার দিকে তাকায়। আয়শাকে কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায় সে। রাগের সময় আয়শাকে কিছু বললে তার রাগটা আরো বেড়ে যায়। আয়শা এবার রিক্সা মামাকে রাগ করে বলে, ওই মিঞা! আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি তামাশা দেখছেন? তাড়াতাড়ি পা চালান। রিক্সা মামা পা ঘুরাতে শুরু করেন। আয়শা রিক্সা থেকে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে বলে, আমাকে আর ফোন দিলে তোমার হাত কেটে দিবো বুঝলে? দিগন্তের চোখে রিক্সাটা আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে যায়। মাটিতে পড়ে থাকা আয়শার ব্যাগটা হাতে নেয় দিগন্ত। ব্যাগটা খুলে দেখে ১টা কলম। যেটা দিগন্ত টিউশনির টাকা থেকে আয়শাকে জন্মদিনের উপহার দিয়েছিল। ১টা মিহি রঙের লিপস্টিক, এটা দিগন্তের অতি প্রিয়, আর কিছু টাকা রাখা আছে ব্যাগটার ভিতর। ভাবছিল ব্যাগটা নিয়ে রিক্সার পিছে পিছে গিয়ে আয়শাকে দিয়ে আসবে। কিন্তু আয়শা এখন যে পরিমাণ রেগে আছে, তাতে ব্যাগটা এই মুহূর্তে দেওয়া উচিত হবে না। দিগন্ত মনে করল ব্যাগটা পরে দেওয়াটাই শ্রেয়। ব্যাগটা হাতে করে নিয়ে হাঁটতে থাকে দিগন্ত। রাস্তার ওপাশে ২টা ছেলে দিগন্তের হাতে মেয়েদের ব্যাগ দেখে জোরে জোরে হেসে উঠে। দিগন্তও তাদের হাসি দেখে জোরে জোরে হাসতে থাকে, কিন্তু এখন আর ওই ছেলেগুলো হাসছেনা। ওরা অবাক হয়ে দিগন্তের হাসি দেখছে।হয়ত ভাবছে কোন পাগল হবে বোধ হয়। বাসায় এসে আয়শার মনটা কেমন যেন ছটফট করছে। যদিও সে ইচ্ছা করে রাগ দেখিয়ে ব্যাগটা ওখানে ফেলে এসেছে। দিগন্তের আজ মেসের ভাড়া দেওয়ার শেষ তারিখ।আয়শা জানে দিগন্তের বাধ্য হয়েই ওই টাকা থেকে মেসের ভাড়া দিতে হবে। এমনিতে টাকা দিলে দিগন্ত কখনো নিতো না। তাই অযথাই ছেলেটার সাথে রাগ দেখিয়ে ব্যাগটা ওখানে রেখে আসা। কিন্তু আয়শার মনটা বারবার ছটফট করছে। দিগন্ত কি মনে কষ্ট পেল? কি জানি! ব্যাগের অজুহাত দেখিয়ে আগামিকাল দেখা করে সরি বলে দিবো। সরি না বললেও অবশ্য চলবে। কারণ আয়শা জানে এই ছেলেটা হাজার কষ্ট পেলেও তাকে ছেড়ে চলে যাবেনা। হয়ত এজন্যই একটু বেশিই ভালোবাসে ছেলেটাকে। রাত ১১টা ৩০মিনিট। দিগন্তের চোখে ঘুম নেই। সে ঘুমানোর চেষ্টাও করছেনা। জেগে জেগে আনমনা হয়ে ভবিষ্যতের কথা ভাবছে দিগন্ত, ভালো একটা চাকরি করব, আয়শাকে বিয়ে করব, ছোট একটা সংসার হবে কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হুট করে ফোনটা বেঁজে উঠে দিগন্তের। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আয়শার কল। কলটা রিসিভ করার সাথে সাথে আয়শা বলে, ওই চোর। আজকে চোরের মত আমার ব্যাগ নিয়ে গেলে কেন? -আরে আমি'তো ব্যাগটা মাটিতে..... (দিগন্ত) দিগন্তের কথা শেষ করতে না দিয়েই আয়শা আবার বলে, চুপ...একদম চুপ। আমি আগামিকাল সকালে ক্যাম্পাসে আমার ব্যাগটা চাই। ঠিক আছে? -হ্যাঁ, ঠিক আছে। (দিগন্ত) আয়শা ফোনটা কেটে দেয়। দিগন্ত মুচকি একটা হাসি দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে সকাল হওয়ার। পরেরদিন সকালে ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে আছে আয়শা আর অপেক্ষা করছে দিগন্তের জন্য। কিছুক্ষণ পরেই দিগন্ত আসলো, আয়শার দিকে ব্যাগটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো, আয়শা এই নাও তোমার ব্যাগ... আর একটা কথা বলি? রাগ করবে না হ্যাঁ? -কি কথা?( আয়শা) -তোমার ব্যাগে যে টাকা ছিল, ওটা আমি খরচ করে ফেলছি। (দিগন্ত) কথাটা শুনে আয়শার মন খুশিতে ভরে উঠে। আয়শার ভিতরে প্রশান্তির হাসি। কিন্তু দিগন্তের সামনে গম্ভীর মুখ করে বলে, আমার ব্যাগে টাকা! মিথ্যা কেন বলছো দিগন্ত? আমার ব্যাগে কোন টাকা ছিলনা। -আরে না না। আমি সত্যি বলছি টাকা ছিল'তো। তোমার টাকা দিয়েই তো আব্দুল চাচাকে কম্বল আর শীতের কাপড় কিনে দিলাম। বেচারা শীতে খুব কষ্ট পাচ্ছিল জানো। আয়শা অবাক হয়ে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে বলে, আব্দুল চাচাকে কম্বল? আর তোমার মেসের ভাড়া? -৫দিন সময় নিয়েছি।টিউশনির টাকাটা হাতে পেলেই দিয়ে দিবো। সাথে তোমার টাকাটাও। (দিগন্ত) কথাটা শুনে দিগন্তের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আয়শা। ওর মুখ দিয়ে কোন কথা বলতে পারছেনা। চোখগুলো পানিতে টলমল করছে। যে ছেলেটা নিজে চলতে পারেনা, সে টাকা পেয়ে মানুষকে কম্বল কিনে দিচ্ছে? যে কি'না তার ভবিষ্যতের পথ চলার সঙ্গী। আয়শার দিকে তাকিয়ে দিগন্ত আবারো বললো, আচ্ছা আয়শা গতকাল বলছিলে তোমাকে ফোন দিলে হাত কেটে ফেলবে। আজকে থেকে কি ফোন দিতে পারব? কথাটা শুনে আয়শার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। কোন কথা না বলে দিগন্তকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। দিগন্ত অবাক হয়ে আয়শার এমন কাণ্ড দেখতে থাকে। সে জানেনা মেয়েটা কান্না কেন করছে? কেনই বা এতো শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে? দিগন্ত মনে মনে বলে, "আবার কোনো ভুল করলাম না'তো"? বিঃদ্রঃ যে মানুষটি আপনার কান্না দেখে নিজেও কেঁদে ফেলে তাকে কখনো হারিয়ে যেতে দিবেন না, কারণ খুব বেশি ভালো না বাসলে কেউ কারোর জন্য কাঁদে না।

Comments

Popular posts from this blog

মিশন থানচি

মিশন থানচি> রেমাক্রি> নাফাখুম>জিনাপাড়া> থুইসাপাড়া> দেবতাপাহাড়> আমিয়াখুম> আমাদের যাত্রা ছিল বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নের নাফাখুম এবং দুর্গম নাক্ষিয়ং এর দেবতাপাহাড় >আমিয়াখুম>ভেলাখুম>সাতভাইখুম। ১ম দিন- কুমিল্লা থেকে রাত ১২.৪৫ টায় সৌদিয়া বাসে (টিকিট ৬২০) যাত্রা শুরু করে সকাল ৬.০০ টায় বান্দরবান শহরে পৌছয়ে যাই। বাস থেকে নেমে নাস্তা শেষ করে চান্দের গাড়ি রির্জাভ (৫৫০০৳) করে থানচির উদ্দেশ্য রওনা দেয়। যেতে যেতে পথে চঁাদ উঠেছিল না মেঘের সমুদ্র দেখা মিলছিল.এই সমুদ্রের বর্ননা হয়ত লিখে বা ক্যামেরা বন্দী করে বুঝানো যাবে না স্বয়ং নিজ চোখে না দেখিলে। বেলা ১১ টার দিকে আমরা থানচি পৌছে যাই, থানচি থেকে ১০-১২কি.মি আগে বিজিবি চেকপোস্ট পরে, সেখানে আমাদের সবার আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দিয়ে নাম ঠিকানা লিখে এন্ট্রি করতে হয় NID, Varsity ID, Birth certificate যেকোন একটা দিলেই হয়। বিজিবি এর একটা ক্যাফে আছে ওখানে স্থানীয় বাগানের একদম ফ্রেস পেপে, কমলার জ্যুস পাওয়া যায়, চায়লে ট্রাই করে দেখতে পারেন।কয়েকদিন আগে থেকেই ১৩০০০টাকা দিয়ে লোকাল গাইড + নৌকা(আপ ডাউন) ৩ দিনের ...

আমি মন মন্দিরে পূজা দেব

আমি মন মন্দিরে পূজা দেব আল্লাহ ... আল্লাহ হু-আকবর ... আমি মন মন্দিরে পূজা দেব সত্যম শীবম অনন্তম আমি দেল কাবাতে নামাজ পড়ব আল্লাহ হু-আকবর ... হু-আকবর আমি মন মন্দিরে পূজা দেব শিব শুন্দরম অনন্তম আমি মন মন্দিরে পূজা দেব পড়ব নামাজ দেল কাবায় মসজিদ মন্দিরে জেতে বলনা আমায় তোমরা মন্দির মসজিদে যেতে বলনা আমায়। মানুষ যদি আদম সন্তান সৃষ্টি একজনার তবে ভিন্ন ভিন্ন ঘর হবে কেন ভিন্ন কেন আচার আমি ঘর হারা এক পথের মানুষ ... আল্লাহ ... আমি ঘর হারা এক পথের মানুষ আপন করলো পথ আমায় আরে জন্ম দেখি মরণ দেখি তাঁরে দেখি না অদৃশ্য তার প্রেমের বলি আমরা কজনা জগত জুড়ে রক্ত সাগর কারে পায় কে বয়ে যায় আমি মন মন্দিরে পূজা দেব সত্যম শীবম অনন্তম আমি দেল কাবাতে নামাজ পড়ব আল্লাহ হু-আকবর

দেখলে তোকে, বদলায় দিন

youtube দেখলে তোকে, বদলায় দিন বদলায় রাত, বদলায় ঘুম সঙ্গে সময়। সন্ধ্যে হলে, বন্ধ ঘরে মনে পড়ে তোরই কথা এমনই হয় । কেন যে তোকে পাহারা, পাহারা দিল মন । কেন রে এতো সাহারা, সাহারা সারাদিন । কেন যে তোকে পাইনা, পাইনা মনে হয়, সারাটা দিন । কেন যে তোকে পাহারা, পাহারা দিল মন । কেন রে এতো সাহারা, সাহারা সারাদিন । কেন যে তোকে পাইনা, পাইনা মনে হয়, সারাটা দিন । চাঁদেরই ঝর্ণা যেমন ভেজায় পাহাড় । ততটা আদর আছে তোকে দেওয়ার । দেখে যা ইচ্ছে কত আকাশ ছোঁওয়ার । কেন যে তোকে পাহারা, পাহারা দিল মন । কেন রে এতো সাহারা, সাহারা সারাদিন । কেন যে তোকে পাইনা, পাইনা মনে হয়, সারাটা দিন । কেন যে তোকে পাহারা, পাহারা দিল মন । কেন রে এতো সাহারা, সাহারা সারাদিন । কেন যে তোকে পাইনা, পাইনা মনে হয়, সারাটা দিন ।